• শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে ইউনূস-মোদী’র বৈঠক

খবর বাংলাদেশ ডেস্ক / ১০৯ বার পঠিত
প্রকাশিত সময় : শনিবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৫

ব্যাংককে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন। ৪০ মিনিটের এই বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রধানতম দুই দেশের সরকার প্রধান পারস্পরিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে খোলামনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে টানা পোড়নের বিষয়টি মিডিয়ায় উঠে আসে। সেই সাথে দুই দেশের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্যর বিষয়টিও উঠে আসে। যদিও উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে সরাসরি কোনো বিষয়ে কেউ কাউকে দোষারোপ করেননি। শুক্রবার ব্যাংককে প্রথম বাংলাদেশের অর্ন্তবর্তী সরকার প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনুস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে প্রথশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক বিষয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

অধ্যাপক ইউনুস বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। আমাদের দুটি দেশের বন্ধুত্ব সুদৃঢ় ইতিহাস, ভৌগলিক নৈকট্য এবং সাংস্কৃতিক সাদৃশ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালের আমাদের কঠিন সময়ে ভারত সরকার ও জনগণের অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য আমরা চিরকৃতজ্ঞ। দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুই দেশের জনগণের কল্যাণে সম্পর্ককে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে আমরা আপনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চাই।’

তিনি আরো বলেন, অধ্যাপক ইউনুস শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চান। তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মিডিয়ার মাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন, যা ভারতের আতিথেয়তার অপব্যবহার বলে মনে হয়। শেখ হাসিনা অন্তর্র্বতী সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক অভিযোগ করে চলেছেন।

অধ্যাপক ইউনুস জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অনুসন্ধানমূলক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করেন, যা ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্র আওয়ামী লীগ কর্মীদের দ্বারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ দিয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- গণঅভ্যুত্থানের সময় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ১৩ শতাংশই শিশু। প্রতিবেদনটি এটাও জানায়- হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন এবং অমানবিক কার্যকলাপের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

বিমসটেকের নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে অধ্যাপক ইউনুস সাত সদস্য দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য ভারতের সমর্থন চান। তিনি গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি নবায়নের আলোচনা এবং তিস্তা পানিবণ্টন চুক্তির চূড়ান্তকরণের আহ্বান জানান।
বিমসটেকের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় অধ্যাপক ইউনুসকে অভিনন্দন জানান এবং ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, ভারত সবসময় বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি অধ্যাপক ইউনুসের আন্তর্জাতিক মর্যাদার কথা স্মরণ করে বলেন, ভারত সর্বদা একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ভারত বাংলাদেশে কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না আমাদের সম্পর্ক জনগণের সঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি শেখ হাসিনার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ভারতের সম্পর্ক কোনো ব্যক্তি বা দলের সঙ্গে নয়, বরং দেশের সঙ্গে।

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষীরা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালায় এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ভারতের ভেতরেই ঘটে। উভয় নেতা বিষয়টি নিয়ে একসঙ্গে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিমসটেকের বাংলাদেশের চেয়ারম্যানশিপের বিষয়ে অধ্যাপক ইউনুস আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিমসটেকের দৃশ্যমানতা বাড়াতে চায় এবং এই সংস্থাকে একটি কার্যকর ও প্রাণবন্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চায়, যা এই অঞ্চলের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে এবং বিশ্বব্যাপী পণ্য আমদানি-রপ্তানির একটি দক্ষ পথ তৈরি করবে।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. খলিলুর রহমান, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালসহ অন্যান্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

 

তথ্য সূত্র:বাসস

আপনার মন্তব্য প্রদান করুন...


এই ক্যাটাগরীর আরো খবর..
https://slotbet.online/